ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

দরিয়ানগর পাখির অভয়ারণ্যে ফিরেছে পাখির দল

pakhiআহমদ গিয়াস, কক্সবাজার::

গত মাসখানেক আগে একটানা তীব্র বর্ষণের কারণে পাহাড় ধস চলাকালে পালিয়ে যাওয়া পাখির দল আবারো ফিরতে শুরু করেছে কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরস্থ পাখির অভয়ারণ্যে। তবে এবার আসছে নতুন পাখির দল। গত তিনদিন ধরে ১২/১৪টি বাতাসি পাখির একটি দল অভয়ারণ্যের পাহাড়ের খাড়া ঢালে বাসা তৈরীর জন্য গর্ত খুঁড়ছে। কয়েক জোড়া স্পটেট কিং ফিশার বা ডোরাকাটা মাছরাঙা গত মাসাধিককাল ধরে গর্ত খুঁড়ছে। এছাড়া নীল রঙের মাছরাঙা, ঘুঘুসহ আরো কয়েক প্রজাতির পাখির বিচরণ দেখা যাচ্ছে অভয়ারণ্য এলাকায়। গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ বন্ধ থাকায় নতুন পাখির আনাগোনা দিনদিন বাড়ছে বলে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় পর্যবেক্ষক সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের চতুর্থ সপ্তাহে পাহাড় ধসে দরিয়ানগর পাখির অভয়ারণ্যে পাখির বাসা নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য এর আগেই সুঁইচোরা, শালিক, কাঠ শালিক ও চড়ুই পাখি পাহাড়ে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করে অন্যত্র চলে যায়। টানা তিন মাস ধরে অভয়ারণ্যে এসব পাখি প্রজননকাল অতিবাহিত করে। এ সময় অন্তত ৩ হাজার নতুন বাচ্চা ফুটে। মাস খানেক আগে পাহাড় ধস চলাকালেও কিছু পাখির বাসা অবশিষ্ট ছিল। পরে তা ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর কয়েক জোড়া স্পটেট কিং ফিশার বা ডোরাকাটা মাছরাঙা পাখি মাস খানেক ধরে পাহাড়ের ঢালে গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরির চেষ্টা করছিল। গত সোমবার পাখির অভয়ারণ্য সরেজমিন পরিদর্শনকালেও আইইউসিএন (ইন্টান্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভ ন্যাচার) এর জরীপে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় থাকা একজোড়া ডোরাকাটা মাছরাঙা পাখিকে পাহাড়ের ঢালে গর্ত খুঁড়তে দেখা যায়।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে গত সোমবার ভোর থেকে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত ১২/১৪টি বাতাসি পাখির একটি দলকে অভয়ারণ্যের পাহাড়ের খাড়া ঢালে বাসা তৈরির জন্য গর্ত খুঁড়তে দেখা গেছে। আবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এক জোড়া স্পটেট কিং ফিশার বা ডোরাকাটা মাছরাঙাকে গর্ত খুঁড়তে দেখা যায়। এছাড়া অভয়ারণ্য এলাকায় বিচরণ করতে দেখা যায় নীল রঙের মাছরাঙা, ঘুঘু, শালিক চড়ুই, ফিঙে, দোয়েল, মুনিয়াসহ আরো কয়েক প্রজাতির পাখিকে।

গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ বন্ধ থাকায় নতুন পাখির আনাগোনা দিনদিন বাড়ছে বলে জানায় স্থানীয় পর্যবে করা।

প্রসঙ্গত: কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড় থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন প্রায় ১১ একর বিশিষ্ট দরিয়ানগর বানরের পাহাড়কে ঘিরে একটি পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। স্থানীয় পাখি পর্যবেক্ষক ও পরিবেশবাদীদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক উদ্যোগটি গ্রহণের পর প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। গত রমজান মাসে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে। এ সময় এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরীর জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন বর্তমানে উক্ত অভয়ারণ্যের নামে প্রায় ১১ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

তিনি জানান জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা, শিক্ষা, গবেষণা ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে দরিয়ানগরে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হচ্ছে। জমি রেজিস্ট্রির কাজ সম্পন্ন হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে পাখির অভয়ারণ্য গড়ার কাজ শুরু হবে। এ কাজে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি দাতা সংস্থার সহায়তার আশ্বাসও পাওয়া গেছে। অভয়ারণ্যটি প্রতিষ্ঠিত হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে।

জানা যায়, জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ দরিয়ানগর পাহাড়ে রয়েছে ঘন বাঁশবন ও সেগুন বাগান ছাড়াও নানা প্রজাতির বৃক্ষ ও গুল্মের সমাহার। পাহাড়ের বাস করে নানা প্রজাতির পাখি। বিভিন্ন গাছেও বাসা বাঁধে পাখির দল। এরই মাঝে এখানে বাস করে বন্য বানরের কয়েকটি দলও। এছাড়া রাতের বেলায় বিচরণ করে বড় আকারের কয়েকটি প্যাঁচা ও শিয়ালের দল। তাছাড়া গুঁইসাপ ও অজগরসহ কয়েক প্রজাতির সরীসৃপও দেখা যায় পাহাড়টিতে।

 

পাঠকের মতামত: